শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩

শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

সমস্ত প্রশংসা সেই মহান মহিমান্বিত প্রভুর জন্য যিনি আমাদেরকে শিক্ষা (দ্বীনি ইলম) এর মত বড় নেয়ামত প্রদান করেছেন। যে জ্ঞানের মর্যাদা দেওয়া ছাত্রদের অপরিহার্য কর্তব্য। অতএব এই নিয়ামতের সংরক্ষণের জন্য কিছু বিষয় এমন আছে যার ওপর আমল করা খুবই জরুরী যেগুলো নিম্নরূপ :- 

১:- দোয়া করা , সদা সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত কেননা দোয়া আবদ্ধ জিনিসগুলোকে খুলে দেয়, দূরের জিনিসগুলো খুব কাছে এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসগুলোকে একত্রিত ও কঠিন কে সহজ করে দেয় সেই জন্য জ্ঞান অর্জনের সময় আমাদেরকে বেশি বেশি দোয়া করা দরকার।


২:- ইখলাস (আন্তরিকতা ও সততা), শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য শিক্ষা অর্জন করা দরকার। এমন প্রতীক্ষায় কখনো থাকা উচিত নয় যে একজন প্রশংসা কারী আপনার প্রশংসা করবে একজন মানুষ আপনার থেকে খুশি হবে কেননা এ সমস্ত জিনিস গুলি ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রথম প্রথম বিনাশী ও বিপদ, বিশেষ করে জ্ঞান অর্জনের পথে। এটা মনে রাখা উচিত যে নিয়তের ক্ষেত্রে শয়তান প্রচুর কুমন্ত্রণা দেয় সেজন্য একজন ছাত্রকে সবসময় নিজের নিয়তকে পরিষ্কার রাখা উচিত।


3:- গুনাহ (পাপাচরণ) কে পরিত্যাগ করা। জ্ঞান সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে পাপাচারণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা কেননা এটা সব ধরনের ভালো কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেই জন্য প্রত্যেকের উচিত যে সে নিজেকে পাপাচরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

আমাদের পূর্বপুরুষকে দেখা উচিত:- যেমন আলী বিন খুশরুম (র:) বলেছেন আমি ওকী’ বিন জাররাহ কে দেখি কিন্তু উনার হাতে কোন পুস্তক থাকে না তবুও তিনি আমাদের থেকে বেশি মুখস্ত করে নেন। তো আমি আশ্চর্য হলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম হে ওকী’ ! আপনি কোন বই রাখেন না, লিখেন না, তারপরেও আমাদের তুলনায় বেশি মুখস্ত করে নেন? তো ওকী’ আমাকে আস্তে করে বললেন; হে আলী, যদি আমি তোমাকে ভুলের ওষুধ বলে দিই তাহলে তুমি তার ওপরে আমল করবে? আমি বললাম হ্যাঁ, ওকী’ বললেন; পাপাচরণ থেকে দূরে থাকা, আল্লাহর শপথ আমি মুখস্ত বিদ্যার জন্য পাপাচরণ থেকে দূরে সরে থাকাই সব থেকে উৎকৃষ্ট দেখেছি।

(6/ 384 سير اعلام النبلاء)


4:- উলামাদের জীবনী বেশি বেশি অধ্যায়ন করা। এটি সাহস এবং সংকল্পকে বাড়ায় অন্তরে আশা জন্মায় যে আমি অমুকের মতো হবো। এ প্রসঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক — 1) তাযকিরাতুল হুফফাজ।

2) সিয়ারু আলামিন নুবালা।

উপরোক্ত বই দুটোই ইমাম যাহাবীর লেখা। এবং উর্দু ভাষায় খতিবুল হিন্দ আব্দুর রউফ ঝান্ডা নগরী (র:) এর পুস্তক ‘আল ইলম ওয়াল উলামা’ এই বইটির অধ্যায়ন উপকারী।


5:- জ্ঞান অর্জনের পূর্বে আদব চরিত্র কে জানা। একজন ছাত্রকে জ্ঞান অর্জনের পূর্বে আদব চরিত্র কে জানা খুবই জরুরী। তার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো অধ্যায়ন করা যেতে পারে।

1) الجامع الاخلاق الراوي وأداب السامع (খতিব বাগদাদী)

2) تذكرة السامع و المتكلم (ইবনে জামাতুল কিনানী)

ইত্যাদি।


6:- সময়ের সূচনা:- একজন ছাত্রের কর্তব্য যে সময়ের হেফাজত করবে। সে নিজের সময়কে বেশি বেশি জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যয় করবে এবং তার সাথে সাথে নিজের সময়কে খুব সুন্দর করে পরিচালনা করবে ও তার ওপর আমল করবে যাতে করে সময় বিনষ্ট না হয়ে যায়।  কিছু সালাফগন বলেছেন; এমন কোন দিন যেদিন আমি কোন জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি সেদিনটা আমার কাছ থেকে চলে যাই তো আমার মনে হয় যে এই দিনটা আমার জন্য বরকতহীন দিন হয়ে যায়। ( সাইদুল খাতির/ ইবনুল জাওযী (র:) পৃষ্ঠা,20 )


7:- যখনই কিছু জ্ঞান বাড়বে তখনই আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা দরকার। আবু ক্বিলাবাহ বলেছেন; যখন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কিছু শিখিয়ে দেবেন তখন তুমি তার দরুন অতিরিক্ত ইবাদত করো। (ইক্বতিযাউল ইলম ওয়াল আমল, পৃষ্ঠা 34)


8:- বেশি বেশি কুরআন পাঠ করা। এই আমল থেকে বেশিরভাগ ছাত্র বঞ্চিত কিন্তু এটা সত্য যে এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা এবং ভয় বাড়ে যেটা ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে সহায় হয়ে থাকে। ইমাম ইব্রাহিম আল মাকদেসী নিজের একজন ছাত্র আব্বাস ইবনে আব্দুদ দাসীম কে উপদেশ দিতে গিয়ে বললেন যে তুমি বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করো কেননা তুমি যত বেশি কোরআন পাঠ করবে ততই তোমার জন্য জ্ঞান অর্জন করা এবং অনুসন্ধান সহজ হয়ে যাবে অতঃপর আব্বাস বললেন যে আমি এটা দেখেছি এবং অনুভব করেছি কেননা আমি যখন বেশি বেশি কুরআন পাঠ করি তখন আমার জন্য হাদিস লেখা এবং শোনা অনেক সহজ হয়ে যায় আর যখন তেলাওয়াত করি না তখন সহজ হয় না।

(يا طالب! كيف تحفظ؟ كيف تفهم؟

এই পুস্তকটির কিছুটা সারাংশ পৃষ্ঠা,19)


পরিশেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া যে তিনি আমাদের উপরোক্ত বর্ণিত জিনিসগুলোর প্রতি আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন সুম্মা আমীন।


দেলোয়ার হোসেন

কুল্লিয়া শারিয়াহ দ্বিতীয় বর্ষ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ঈদের স্বলাতের বিধান ও তার বিভ্রান্তির নিরসন

আমাদের সমাজে *ঈদের স্বলাতের বিধান* সম্পর্কে যে মতটি প্রচলিত আছে সেটি হচ্ছে *সুন্নাতে মুয়াক্কাদা* আর এটা হচ্ছে *ইমাম শাফেয়ী* ( রাহিমাহুল্লা...