শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩

ঈদের স্বলাতের বিধান ও তার বিভ্রান্তির নিরসন

আমাদের সমাজে *ঈদের স্বলাতের বিধান* সম্পর্কে যে মতটি প্রচলিত আছে সেটি হচ্ছে *সুন্নাতে মুয়াক্কাদা* আর এটা হচ্ছে *ইমাম শাফেয়ী* ( রাহিমাহুল্লাহ)এবং *ইমাম মালেক* (রাহিমাহুল্লাহ) এর মত বা মাযহাব | কিন্তু এই মতের থেকে যেটা বেশি শুদ্ধ সেটা হচ্ছে আসলে *ঈদের স্বলাতের বিধান হচ্ছে ফরয বা ওয়াজিব এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নয়*।

আর এই সম্বন্ধে উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে এবং তাঁরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছেন ,

*প্রথম মত :*

 ঈদের স্বলাত হচ্ছে *সুন্নতে মুয়াক্কাদা* আর এই মত হচ্ছে দুই ইমামের *ইমাম মালেক* (রাহিমাহুল্লাহ) এবং *ইমাম শাফেয়ী* (রাহিমাহুল্লাহ) এর


*দ্বিতীয় মত :*

 *ফারযে কিফায়া* অর্থাৎ এমন ফরয যা কিছু সংখ্যক লোক আদায় করলে বাকিরা ছাড় পেয়ে যাবে। বা গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে আর এটা মত হচ্ছে *ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল* ( রাহিমাহুল্লাহ) এর


*তৃতীয় মত :*

ঈদের স্বলাত আদায় করা হচ্ছে *ফরয ওয়াজিব* প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে যদি কেউ ত্যাগ করে তাহলে সে গুনাগার হবে আর এটা মত হচ্ছে *ইমাম আবু হানিফা* আর *ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল* (রাহিমাহুল্লাহ) এর 

যেটা অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়

আর এই মতটিকে

 *শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ্* (রাহিমাহুল্লাহ) প্রাধান্য  দিয়েছে (মাজমুউল ফাতাওয়া) 23তম খন্ড (পৃষ্ঠা নং 61,62) 

এবং

*আল্লামাহ্ শাওকানি* (রাহিমাহুল্লাহ) প্রাধান্য দিয়েছেন । (আস সাইলুল জাররার ) (  পৃষ্ঠা 192) 

 *যে সমস্ত আলেমগণ* বলেছেন যে ঈদের  স্বলাত আদায় করা হচ্ছে ফরয ওয়াজিব তিনারা দলিল হিসেবে পেশ করেছেন নিচের হাদিসটিকে এ হাদিস প্রমান বহন করে যে ঈদের স্বলাত হচ্ছে ফরয,  কেননা নবী ﷺ

আদেশ করেছেন আর যদি কোন ক্বারীনা না পাওয়া যায়, তাহলে নবীﷺ এর আদেশ কে পালন করা অপরিহার্য, যা উসুলে ফিকহের এক উসুল    


 *(الأمر يدل علي الوجوب*


এর দ্বারা সাব্যস্ত হয় 


*📕 হাদিস :* 


روى البخاري(351) ومسلم (890) عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْها قَالَتْ : أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى الْعَوَاتِقَ وَالْحُيَّضَ وَذَوَاتِ الْخُدُورِ ، فَأَمَّا الْحُيَّضُ فَيَعْتَزِلْنَ الصَّلاةَ وَيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُسْلِمِينَ . قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِحْدَانَا لا يَكُونُ لَهَا جِلْبَابٌ . قَالَ : لِتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا .

অত্র হাদীস প্রমাণ বহন করে যে ঈদের স্বলাত ফরয ওয়াজিব কেননা রাসূলﷺ আদেশ করেছেন ।


*হাফেজ ইমরান আইয়ূব লাহুরি* (হাফিযাহুল্লাহ) বুলুগুল মারামের শারাহ (ব্যখ্যা গ্রন্থ) *ফিকহুল ইসলাম* (পৃষ্ঠা নাং 228 )এর মধ্যে বলেছেন যে *ঈদের স্বলাত ওয়াজিব* কেননা রসূল ﷺ ঋতুবতী নারীদের কেও  ঈদের স্বলাতে উপস্থিত হতে বলেছেন ।


*আল্লামাহ আমীর স্বানআনী* (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর নিজ গ্রন্থে   *(সুবূলুস্  সালাম)*  দ্বিতীয় খন্ড  ( পৃষ্ঠা নং 66, 67) এর মধ্যে ঈদের স্বলাতকে *ওয়াজিব* বলেছেন।



*ড: আব্দুল আযীম আল- বাদাবী* (রাহিমাহুল্লাহ)

বলেছেন তাঁর কিতাব (আল অজীয ফি ফিকহিস সুন্নাহ অল কিতাবিল আযীয) (পৃষ্ঠা নাং 156 )  তে  *صلاة العيدين واجبة علي الرجال والنساء*


*অর্থাৎ*: ঈদের স্বলাত নর নারী প্রত্যেকের উপরে *ফরয ওয়াজিব*।



শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ্ ( রাহিমাহুল্লাহ) এর ছাত্র *আল্লামাহ্ ইবনে কায়্যিম* (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন ,

*صلاة العيد واجبة علي الأعيان وهذا هو الصحيح في الدليل*

  (الصلاة وأحكام تاركها) (ص 39,40)


*অর্থাৎ*: ঈদের স্বলাত *ওয়াজিব* প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে আর দলিলের ভিক্তিতে এটাই *সঠিক মত*।





*আল্লামাহ্ ইবনে উসাইমীন* (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,


*الذي أرى أن صلاة العيد فرض عين، وأنه لا يجوز للرجال أن يدعوها، بل عليهم حضورها، لأن النبي صلى الله عليه وسلم أمر بها*


*অর্থাৎ*: আমার মত হচ্ছে যে নিশ্চয় ঈদের স্বলাত হচ্ছে *ফারযে আইন* অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে ফরয অনিবার্য অবধারিত এজন্য কোন  পুরুষ ব্যক্তির ঈদের স্বলাত ছাড়া *জায়েয* হবেনা বরং জরুরী ভিত্তিতে তাকে ঈদের স্বলাতে উপস্থিত হতে হবে কেননা *নবীﷺ* আদেশ করেছেন।


*আল্লামাহ্ ইবনে উসাইমিন* (রাহিমাহুল্লাহ) এটাও বলেছেন যে


*"والذي يترجح لي من الأدلة أنها فرض عين* ، 


*অর্থাৎ:* দলিল গুলির  ভিক্তিতে আমার কাছে প্রাধান্যযোগ্য প্রমান হচ্ছে যে ঈদের স্বলাত *ফারযে আইন*


(মাজমুউল ফাতাওয়া ) 

১৬ তম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২১৪

 



*وقال الشيخ ابن باز في "مجموع الفتاوى" (13/7) عن القول بأنها فرض عين ، قال :*


*"وهذا القول أظهر في الأدلة ، وأقرب إلى الصواب" اهـ .*


*অর্থাৎ:* শায়খ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন   "মাজমুউল ফাতাওয়া ১৩ তম খন্ড (পৃষ্ঠা নং ৭) এর মধ্যে যে ঈদের স্বলাত হচ্ছে ফরযে আইন আর বলেছেন যে *এটাই মত সব থেকে বিশুদ্ধ* 



*আল মাজমু*, ৫ম খন্ড  (পৃষ্ঠা নং ৫)

*আল  মুগ্নি* ,  (তৃতীয় খন্ড) 

(পৃষ্ঠা নং ২৫৩)

 *আল ইনসাফ* , ৫ম খন্ড (পৃষ্ঠা নং ৩১৬) 

*আল ইখতায়রাত*, ( পৃষ্ঠা নং ৮২ )


*সারাংশ* 


*১* ,ঈদের স্বলাত নারী পুরুষ প্রত্যেক এর উপরে ওয়াজিব।


*২* যদি কেউ ঈদের স্বলাত  পরিত্যাগ করে তাহলে সে গুনাহগার হবে।

*৩* ঋতুবতী নারীদের কেও  ঈদের মাঠে হাজির হতে হবে যদিও তাদের কে  ঈদের স্বলাত আদায় করতে হবেনা।

*৪* মহিলাদেরকেও ঈদের মাঠে হাজির হতে হবে 


নিয়াযুদ্দিন 

কুল্লিয়া দাওয়াহ্ প্রথম বর্ষ

শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩

খাওয়ার সময় কথা বলা কি হারাম?

আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, খাদ্য খাওয়ার সময় কোন কথা বার্তা বলা যাবেনা, এমনকি সালামের উত্তরও দেওয়া যাবেনা*।

*এটা নাকি অবৈধ (হারাম) অথচ এই ব্যাপারে  *সুস্পষ্টভাবে ক্বুরআনে  কোন আয়াত বা সহিহ্ সুত্রে কোন বর্ননা পাওয়া যায় না।* 

*তথাপি আমরা খাওয়ার সময় কথা বলা এবং সালামের উত্তর দেওয়া কে অবৈধ মনে করে থাকি।*

*কিন্তু এই ব্যাপারে একটি আরবী বাক্য প্রসিদ্ধ আছে সেটি হচ্ছে*

*لا سلام ولا كلام علي الطعام*

*অর্থাৎ:*খাওয়া অবস্থায় সালাম কালাম নেই* ।

*আর এই বাক্যের ব্যাপারে *আল্লামাহ্ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সহ অসংখ্য বিদ্দ্যানগন বলেছেন যে এটা হচ্ছে ভিক্তিহিন শরিয়তে এর কোন অস্তিত্ব নেই বরং এর বিপরীতে সহিহ্ সুত্রে হাদিস বর্নিত আছে যে রসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খাওয়া অবস্থায় কথা বলেছেন উদাহরণ স্বরূপ একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল,* 


*عَنْ جابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، أنَّ النَّبِيَّ ﷺ سَألَ أهْلَهُ الأُدُمَ، فَقالُوا: ما عِنْدَنا* *إلّا خَلٌّ، فَدَعا بِهِ، فَجَعَلَ* *يَأْكُلُ بِهِ، ويَقُولُ: «نِعْمَ الأُدُمُ *الخَلُّ، نِعْمَ الأُدُمُ الخَلُّ»*

*অর্থাৎ:* *জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযি‍:) হতে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ স্ত্রীগনের কাছে তরকারি চাইলেন, তো তিনারা বল্লেন যে আমাদের কাছে কিছুই নেই সিরকা ব্যাতিত তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে আসতে বল্লেন তার পরে খেতে লাগলেন আর খাওয়া অবস্থায় বল্লেন যে সিরকা হচ্ছে পছন্দনীয় তরকারি সিরকা হচ্ছে পছন্দনীয় তরকারি ।*


*অত্র হাদিস প্রমান বহন করে যে খাওয়া অবস্থায় কথা বলা জায়েয (বৈধ)*

 

*খাওয়া অবস্থায় কথা বলা জায়েয এই সম্বন্ধে বিজ্ঞ আলেমগনের ফতওয়া ,*


*১: আল্লামাহ, আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) ( শরীত নং ১ / পৃষ্ঠা নং ১৫)*



*২: ইমাম নাবাবী (রাহিমাহুল্লাহ ) সহিহ্ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে (৭/ পৃষ্ঠা নং ১৪)*



*৩: আল্লামাহ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ ) কে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে খাওয়া অবস্থায় কথা বলার বিধান কি ? তো তিনি উত্তরে বললেন যে*

*لا حرج في ذلك وقد تكلم النبي صلى الله عليه وسلم علي الطعام*ووعظ الناس علي الطعام وتحدث معهم علي الطعام فلا حرج في ذلك ولا بأس بذلك والحمدلله*

*অর্থাৎ: এতে কোন সমস্যা নেই কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়া অবস্থায় কথা বলেছেন  এবং মানুষদের কে নসীহত করেছেন এবং তাঁদের সাথে  খাওয়ার সময় কথা বলেছেন এতে কোন সমস্যা নেই কোন দ্বিধা মত নেই , আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য ।*



*৪: মিশরের দারুল ইফতায় যখন প্রশ্ন করা হয়*

*« ما حكم الكلام أثناء تناول الطعام؟». وأجابت الإفتاء بأن الكلام على الطعام مباح،*

*অর্থাৎ: খাওয়ার সময় কথা বলার বিধান কি ?*

*উত্তরে বলা হয়েছে যে খাওয়ার সময় কথা বলা মুবাহ্ অর্থাৎ জায়েয ।*


*এই লিখনী থেকে বুঝা গেল যে খাওয়ার সময় কথা বলা জায়েয ।*


*যখন কথা বলা জায়েয তাহলে সালামের উত্তরও দেওয়া যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।*

নিয়াযুদ্দিন 

ছাত্র জামিয়া সালাফিয়া বানারস (ইউপি) 

স্বপ্ন দেখো আকাশ ছোঁয়া

প্রত্যেক মানুষ তার জীবনে কোনো এক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়। এই আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের উদ্দেশ্যে সে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়।ঠিক তেমনি একজন আদর্শবান শিক্ষার্থী  শিক্ষা অর্জন করে নির্দিষ্ট একটা আশা ও স্বপ্ন নিয়ে। আর এই স্বপ্ন পূরণের জন্য দিবারাত্রী পরিশ্রম করে চলে। তার উচ্চআকাঙ্ক্ষা তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। সে সর্বদা তার সময় লেখাপড়া ও অধ্যয়নে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যেহেতু সে জানে যে, বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করেও সালাফগণ ইলম অর্জনের জন্য কিভাবে সর্বস্ব লুটিয়ে দিয়ে সফল হয়েছেন।

আমরাও তার কিছু নমুনা দেখলে বুঝতে পারবো যে, তিনাদের স্বপ্ন কত উঁচু ছিল এবং তা পূরণের জন্য কিভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
◼️ ইমাম শাফেয়ী রহঃ অত্যন্ত গরীব ও ইয়াতীম ছিলেন। কিন্তু বাল্যকাল থেকেই ইলমের সাথে অগাধ ভালোবাসা ছিল সেই জ্ঞান অর্জনের খাতিরে যখন তিনি বাইরে বেরিয়ে পড়েন তখন তিনার নিকট খাতা ক্রয় করার সমানও কোনো কিছু ছিল না।
অতঃপর তিনি এক দোকানে গিয়ে লিখার কিছু কাগজ দান চাইলেন এবং  যা পড়তেন সেগুলো তাতেই লিখে নিতেন।( তারীখুল ইসলাম...
পরবর্তীকালে এই ব্যক্তিই হয়েছেন ভুবন বিখ্যাত বিদ্বান।
◼️ আবু হিলাল আসকারী বলেনঃ ভাষাবিদ সা'লাব এর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি সবসময় নিজের কাছে বই রাখতেন। একদা এক এক ব্যক্তি তিনাকে নিমন্ত্রণ করলে এই শর্তে তার নিমন্ত্রণ কবূল করেন যে, তার জন্য কিছু জায়গায় ব্যবস্থা করে দিতে হবে যেখানে তিনি বই রেখে পড়াশোনা করতে পারবেন। (আল-হাস্সু আলা ত্বলাবিল ইলম্ পৃষ্ঠা 76)
এইরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে যা দ্বারা এটাই বোঝা যায় যে, আমাদের সালাফগণ এক মাত্র নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরিত করার জন্যই এতো কিছু করেছেন।
অতএব আমাদেরকেও আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখে তা পূরণের জন্য সার্বিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জীবনে অনেক সমস্যা ও প্রতিকূলতা আসতেই পারে তবে তা দেখে বিচলিত হলে হবে না বরং স্বপ্ন পূরণের জন্য এগিয়ে যেতে হবে।
যদি স্বপ্ন দেখো ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ হওয়ার তাহলে তা হতে না পারলেও অনেক উপরে উঠে যাবে।
কিন্তু যদি স্বপ্ন দেখো সাধারণ একজন বিদ্বান হওয়ার তাহলে তার চেয়ে বড় হতে পারবে না।

        তাওহীদুর রহমান।
         দাওয়াহ্ শেষ বর্ষ ।
             9733124468

শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

সমস্ত প্রশংসা সেই মহান মহিমান্বিত প্রভুর জন্য যিনি আমাদেরকে শিক্ষা (দ্বীনি ইলম) এর মত বড় নেয়ামত প্রদান করেছেন। যে জ্ঞানের মর্যাদা দেওয়া ছাত্রদের অপরিহার্য কর্তব্য। অতএব এই নিয়ামতের সংরক্ষণের জন্য কিছু বিষয় এমন আছে যার ওপর আমল করা খুবই জরুরী যেগুলো নিম্নরূপ :- 

১:- দোয়া করা , সদা সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত কেননা দোয়া আবদ্ধ জিনিসগুলোকে খুলে দেয়, দূরের জিনিসগুলো খুব কাছে এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসগুলোকে একত্রিত ও কঠিন কে সহজ করে দেয় সেই জন্য জ্ঞান অর্জনের সময় আমাদেরকে বেশি বেশি দোয়া করা দরকার।


২:- ইখলাস (আন্তরিকতা ও সততা), শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য শিক্ষা অর্জন করা দরকার। এমন প্রতীক্ষায় কখনো থাকা উচিত নয় যে একজন প্রশংসা কারী আপনার প্রশংসা করবে একজন মানুষ আপনার থেকে খুশি হবে কেননা এ সমস্ত জিনিস গুলি ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রথম প্রথম বিনাশী ও বিপদ, বিশেষ করে জ্ঞান অর্জনের পথে। এটা মনে রাখা উচিত যে নিয়তের ক্ষেত্রে শয়তান প্রচুর কুমন্ত্রণা দেয় সেজন্য একজন ছাত্রকে সবসময় নিজের নিয়তকে পরিষ্কার রাখা উচিত।


3:- গুনাহ (পাপাচরণ) কে পরিত্যাগ করা। জ্ঞান সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে পাপাচারণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা কেননা এটা সব ধরনের ভালো কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেই জন্য প্রত্যেকের উচিত যে সে নিজেকে পাপাচরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

আমাদের পূর্বপুরুষকে দেখা উচিত:- যেমন আলী বিন খুশরুম (র:) বলেছেন আমি ওকী’ বিন জাররাহ কে দেখি কিন্তু উনার হাতে কোন পুস্তক থাকে না তবুও তিনি আমাদের থেকে বেশি মুখস্ত করে নেন। তো আমি আশ্চর্য হলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম হে ওকী’ ! আপনি কোন বই রাখেন না, লিখেন না, তারপরেও আমাদের তুলনায় বেশি মুখস্ত করে নেন? তো ওকী’ আমাকে আস্তে করে বললেন; হে আলী, যদি আমি তোমাকে ভুলের ওষুধ বলে দিই তাহলে তুমি তার ওপরে আমল করবে? আমি বললাম হ্যাঁ, ওকী’ বললেন; পাপাচরণ থেকে দূরে থাকা, আল্লাহর শপথ আমি মুখস্ত বিদ্যার জন্য পাপাচরণ থেকে দূরে সরে থাকাই সব থেকে উৎকৃষ্ট দেখেছি।

(6/ 384 سير اعلام النبلاء)


4:- উলামাদের জীবনী বেশি বেশি অধ্যায়ন করা। এটি সাহস এবং সংকল্পকে বাড়ায় অন্তরে আশা জন্মায় যে আমি অমুকের মতো হবো। এ প্রসঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক — 1) তাযকিরাতুল হুফফাজ।

2) সিয়ারু আলামিন নুবালা।

উপরোক্ত বই দুটোই ইমাম যাহাবীর লেখা। এবং উর্দু ভাষায় খতিবুল হিন্দ আব্দুর রউফ ঝান্ডা নগরী (র:) এর পুস্তক ‘আল ইলম ওয়াল উলামা’ এই বইটির অধ্যায়ন উপকারী।


5:- জ্ঞান অর্জনের পূর্বে আদব চরিত্র কে জানা। একজন ছাত্রকে জ্ঞান অর্জনের পূর্বে আদব চরিত্র কে জানা খুবই জরুরী। তার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো অধ্যায়ন করা যেতে পারে।

1) الجامع الاخلاق الراوي وأداب السامع (খতিব বাগদাদী)

2) تذكرة السامع و المتكلم (ইবনে জামাতুল কিনানী)

ইত্যাদি।


6:- সময়ের সূচনা:- একজন ছাত্রের কর্তব্য যে সময়ের হেফাজত করবে। সে নিজের সময়কে বেশি বেশি জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যয় করবে এবং তার সাথে সাথে নিজের সময়কে খুব সুন্দর করে পরিচালনা করবে ও তার ওপর আমল করবে যাতে করে সময় বিনষ্ট না হয়ে যায়।  কিছু সালাফগন বলেছেন; এমন কোন দিন যেদিন আমি কোন জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি সেদিনটা আমার কাছ থেকে চলে যাই তো আমার মনে হয় যে এই দিনটা আমার জন্য বরকতহীন দিন হয়ে যায়। ( সাইদুল খাতির/ ইবনুল জাওযী (র:) পৃষ্ঠা,20 )


7:- যখনই কিছু জ্ঞান বাড়বে তখনই আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা দরকার। আবু ক্বিলাবাহ বলেছেন; যখন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কিছু শিখিয়ে দেবেন তখন তুমি তার দরুন অতিরিক্ত ইবাদত করো। (ইক্বতিযাউল ইলম ওয়াল আমল, পৃষ্ঠা 34)


8:- বেশি বেশি কুরআন পাঠ করা। এই আমল থেকে বেশিরভাগ ছাত্র বঞ্চিত কিন্তু এটা সত্য যে এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা এবং ভয় বাড়ে যেটা ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে সহায় হয়ে থাকে। ইমাম ইব্রাহিম আল মাকদেসী নিজের একজন ছাত্র আব্বাস ইবনে আব্দুদ দাসীম কে উপদেশ দিতে গিয়ে বললেন যে তুমি বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করো কেননা তুমি যত বেশি কোরআন পাঠ করবে ততই তোমার জন্য জ্ঞান অর্জন করা এবং অনুসন্ধান সহজ হয়ে যাবে অতঃপর আব্বাস বললেন যে আমি এটা দেখেছি এবং অনুভব করেছি কেননা আমি যখন বেশি বেশি কুরআন পাঠ করি তখন আমার জন্য হাদিস লেখা এবং শোনা অনেক সহজ হয়ে যায় আর যখন তেলাওয়াত করি না তখন সহজ হয় না।

(يا طالب! كيف تحفظ؟ كيف تفهم؟

এই পুস্তকটির কিছুটা সারাংশ পৃষ্ঠা,19)


পরিশেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া যে তিনি আমাদের উপরোক্ত বর্ণিত জিনিসগুলোর প্রতি আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন সুম্মা আমীন।


দেলোয়ার হোসেন

কুল্লিয়া শারিয়াহ দ্বিতীয় বর্ষ

ঈদের স্বলাতের বিধান ও তার বিভ্রান্তির নিরসন

আমাদের সমাজে *ঈদের স্বলাতের বিধান* সম্পর্কে যে মতটি প্রচলিত আছে সেটি হচ্ছে *সুন্নাতে মুয়াক্কাদা* আর এটা হচ্ছে *ইমাম শাফেয়ী* ( রাহিমাহুল্লা...