আমাদের সমাজে *ঈদের স্বলাতের বিধান* সম্পর্কে যে মতটি প্রচলিত আছে সেটি হচ্ছে *সুন্নাতে মুয়াক্কাদা* আর এটা হচ্ছে *ইমাম শাফেয়ী* ( রাহিমাহুল্লাহ)এবং *ইমাম মালেক* (রাহিমাহুল্লাহ) এর মত বা মাযহাব | কিন্তু এই মতের থেকে যেটা বেশি শুদ্ধ সেটা হচ্ছে আসলে *ঈদের স্বলাতের বিধান হচ্ছে ফরয বা ওয়াজিব এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নয়*।
আর এই সম্বন্ধে উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে এবং তাঁরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছেন ,
*প্রথম মত :*
ঈদের স্বলাত হচ্ছে *সুন্নতে মুয়াক্কাদা* আর এই মত হচ্ছে দুই ইমামের *ইমাম মালেক* (রাহিমাহুল্লাহ) এবং *ইমাম শাফেয়ী* (রাহিমাহুল্লাহ) এর
*দ্বিতীয় মত :*
*ফারযে কিফায়া* অর্থাৎ এমন ফরয যা কিছু সংখ্যক লোক আদায় করলে বাকিরা ছাড় পেয়ে যাবে। বা গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে আর এটা মত হচ্ছে *ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল* ( রাহিমাহুল্লাহ) এর
*তৃতীয় মত :*
ঈদের স্বলাত আদায় করা হচ্ছে *ফরয ওয়াজিব* প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে যদি কেউ ত্যাগ করে তাহলে সে গুনাগার হবে আর এটা মত হচ্ছে *ইমাম আবু হানিফা* আর *ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল* (রাহিমাহুল্লাহ) এর
যেটা অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়
আর এই মতটিকে
*শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ্* (রাহিমাহুল্লাহ) প্রাধান্য দিয়েছে (মাজমুউল ফাতাওয়া) 23তম খন্ড (পৃষ্ঠা নং 61,62)
এবং
*আল্লামাহ্ শাওকানি* (রাহিমাহুল্লাহ) প্রাধান্য দিয়েছেন । (আস সাইলুল জাররার ) ( পৃষ্ঠা 192)
*যে সমস্ত আলেমগণ* বলেছেন যে ঈদের স্বলাত আদায় করা হচ্ছে ফরয ওয়াজিব তিনারা দলিল হিসেবে পেশ করেছেন নিচের হাদিসটিকে এ হাদিস প্রমান বহন করে যে ঈদের স্বলাত হচ্ছে ফরয, কেননা নবী ﷺ
আদেশ করেছেন আর যদি কোন ক্বারীনা না পাওয়া যায়, তাহলে নবীﷺ এর আদেশ কে পালন করা অপরিহার্য, যা উসুলে ফিকহের এক উসুল
*(الأمر يدل علي الوجوب*
এর দ্বারা সাব্যস্ত হয়
*📕 হাদিস :*
روى البخاري(351) ومسلم (890) عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْها قَالَتْ : أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى الْعَوَاتِقَ وَالْحُيَّضَ وَذَوَاتِ الْخُدُورِ ، فَأَمَّا الْحُيَّضُ فَيَعْتَزِلْنَ الصَّلاةَ وَيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُسْلِمِينَ . قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِحْدَانَا لا يَكُونُ لَهَا جِلْبَابٌ . قَالَ : لِتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا .
অত্র হাদীস প্রমাণ বহন করে যে ঈদের স্বলাত ফরয ওয়াজিব কেননা রাসূলﷺ আদেশ করেছেন ।
*হাফেজ ইমরান আইয়ূব লাহুরি* (হাফিযাহুল্লাহ) বুলুগুল মারামের শারাহ (ব্যখ্যা গ্রন্থ) *ফিকহুল ইসলাম* (পৃষ্ঠা নাং 228 )এর মধ্যে বলেছেন যে *ঈদের স্বলাত ওয়াজিব* কেননা রসূল ﷺ ঋতুবতী নারীদের কেও ঈদের স্বলাতে উপস্থিত হতে বলেছেন ।
*আল্লামাহ আমীর স্বানআনী* (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর নিজ গ্রন্থে *(সুবূলুস্ সালাম)* দ্বিতীয় খন্ড ( পৃষ্ঠা নং 66, 67) এর মধ্যে ঈদের স্বলাতকে *ওয়াজিব* বলেছেন।
*ড: আব্দুল আযীম আল- বাদাবী* (রাহিমাহুল্লাহ)
বলেছেন তাঁর কিতাব (আল অজীয ফি ফিকহিস সুন্নাহ অল কিতাবিল আযীয) (পৃষ্ঠা নাং 156 ) তে *صلاة العيدين واجبة علي الرجال والنساء*
*অর্থাৎ*: ঈদের স্বলাত নর নারী প্রত্যেকের উপরে *ফরয ওয়াজিব*।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ্ ( রাহিমাহুল্লাহ) এর ছাত্র *আল্লামাহ্ ইবনে কায়্যিম* (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন ,
*صلاة العيد واجبة علي الأعيان وهذا هو الصحيح في الدليل*
(الصلاة وأحكام تاركها) (ص 39,40)
*অর্থাৎ*: ঈদের স্বলাত *ওয়াজিব* প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে আর দলিলের ভিক্তিতে এটাই *সঠিক মত*।
*আল্লামাহ্ ইবনে উসাইমীন* (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
*الذي أرى أن صلاة العيد فرض عين، وأنه لا يجوز للرجال أن يدعوها، بل عليهم حضورها، لأن النبي صلى الله عليه وسلم أمر بها*
*অর্থাৎ*: আমার মত হচ্ছে যে নিশ্চয় ঈদের স্বলাত হচ্ছে *ফারযে আইন* অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে ফরয অনিবার্য অবধারিত এজন্য কোন পুরুষ ব্যক্তির ঈদের স্বলাত ছাড়া *জায়েয* হবেনা বরং জরুরী ভিত্তিতে তাকে ঈদের স্বলাতে উপস্থিত হতে হবে কেননা *নবীﷺ* আদেশ করেছেন।
*আল্লামাহ্ ইবনে উসাইমিন* (রাহিমাহুল্লাহ) এটাও বলেছেন যে
*"والذي يترجح لي من الأدلة أنها فرض عين* ،
*অর্থাৎ:* দলিল গুলির ভিক্তিতে আমার কাছে প্রাধান্যযোগ্য প্রমান হচ্ছে যে ঈদের স্বলাত *ফারযে আইন*
(মাজমুউল ফাতাওয়া )
১৬ তম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২১৪
*وقال الشيخ ابن باز في "مجموع الفتاوى" (13/7) عن القول بأنها فرض عين ، قال :*
*"وهذا القول أظهر في الأدلة ، وأقرب إلى الصواب" اهـ .*
*অর্থাৎ:* শায়খ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন "মাজমুউল ফাতাওয়া ১৩ তম খন্ড (পৃষ্ঠা নং ৭) এর মধ্যে যে ঈদের স্বলাত হচ্ছে ফরযে আইন আর বলেছেন যে *এটাই মত সব থেকে বিশুদ্ধ*
*আল মাজমু*, ৫ম খন্ড (পৃষ্ঠা নং ৫)
*আল মুগ্নি* , (তৃতীয় খন্ড)
(পৃষ্ঠা নং ২৫৩)
*আল ইনসাফ* , ৫ম খন্ড (পৃষ্ঠা নং ৩১৬)
*আল ইখতায়রাত*, ( পৃষ্ঠা নং ৮২ )
*সারাংশ*
*১* ,ঈদের স্বলাত নারী পুরুষ প্রত্যেক এর উপরে ওয়াজিব।
*২* যদি কেউ ঈদের স্বলাত পরিত্যাগ করে তাহলে সে গুনাহগার হবে।
*৩* ঋতুবতী নারীদের কেও ঈদের মাঠে হাজির হতে হবে যদিও তাদের কে ঈদের স্বলাত আদায় করতে হবেনা।
*৪* মহিলাদেরকেও ঈদের মাঠে হাজির হতে হবে
নিয়াযুদ্দিন
কুল্লিয়া দাওয়াহ্ প্রথম বর্ষ